healthy-ifter পুস্টিকর-ইফতার

রোজা পালনকারীর জন্য জরুরী ১১টি পরামর্শ

রমজান মাসে ধর্মীয় বিধি বিধানের পাশাপাশি দৈনন্দিন কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্য স্বাস্থ্য ঠিক রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর সে কারণেই পুষ্টিবিদরা বলছেন দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার পর সেহরি ও ইফতারে খাদ্য দ্রব্য বাছাইও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। জীবনাচরণেও কিছুটা পরিবর্তন এসে থাকে এই সময়ে, পরিবর্তন আসে নিয়মিত কাজের ধরণেও।

 

রোজায় একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ স্বাস্থ্য ঠিক রেখে কিভাবে রোজা করবেন বা রোজার সময় কোন ধরনের খাদ্য দ্রব্য বেশি নেয়া উচিত এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক গোলাম মাওলা বিবিসিকে বলেন অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম থেকে যেমন বিরত থাকতে হবে তেমনি সহজে হজম হয় এমন খাবার খেতে হবে। তবে তার মতে কোনোভাবেই বেশি খাওয়া যাবেনা।

 

পুষ্টিবিদ অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলছেন রোজার জন্য আলাদা ডায়েটের প্রয়োজন নেই। তবে পানি জাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে তবে এর মধ্য বিশুদ্ধ পানি ও ফলের রসই বেশি কাজে লাগে।

 

তিনি বলেন, “ইফতার কোথা থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে ঘরে তৈরি খাবারই সবচেয়ে নিরাপদ। বেশী তেলে ভাজা বাজারের ইফতার শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে”।

 

গোলাম মাওলা ও নাজমা শাহীন দুজনই মনে করেন তৈলাক্ত খাবার, ভাজা পোড়া বর্জন করাই ভালো। বরং ফল ও খেজুর শরীরে পুষ্টি ও শক্তি যোগাবে।

 

রোজার সময় চিকিৎসা বা ঔষধ খেতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত বলে বলছেন পুষ্টিবিদরা ।

healthy-ifter পুস্টিকর-ইফতার

রোজা পালনকারীর জন্য কিছু টিপস:
১. ভাজাপোড়া খাবার নয়

 

অধ্যাপক গোলাম মাওলা বলছেন মাছ ডাল ভাত আদর্শ খাবার। ভোররাতে গরুর মাংস এড়িয়ে মুরগী খেলে ভালো হবে। তবে প্রয়োজন শাক সবজি ও ডাল শরীরের জন্য ভালো হবে। অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলছেন ব্যক্তিকেই আগে বুঝতে হবে কোনটি তার শরীরের জন্য ভালো হচ্ছেনা। যেটি ক্ষতিকর মনে হবে সেটিকে এড়াতে হবে।

 

২. খাদ্য তালিকায় কী থাকবে?

 

পানি, ফল, চিড়া, রুটি, ভাত, সবজি, ডাল, ডিম, হালকা খিচুড়ি খাওয়া যেতে পারে। গোলাম মাওলা বলছেন মানসম্পন্ন হালিম শরীরের জন্য উপকারী হবে। এটি শক্তি বাড়ায়।

 

৩. সতর্ক হয়ে খেতে হবে

 

বিরিয়ানি, তেহারির মতো খাবারকে ভারী খাবার হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। অধ্যাপক গোলাম মাওলা বলছেন মাঝে মধ্যে ইফতারির পর হালকা কম তেলযুক্ত তেহারি খাওয়া মন্দ না।

 

৪. নিয়মিত খাবারকে গুরুত্ব দিতে হবে

 

পুষ্টিবিদ নাজমা শাহীন বলছেন, সাধারণত একজন মানুষ নিয়মিত যেসব খাবার খান রোজার সময়েই সেগুলোই তার জন্য যথেষ্ট। তবে সারাদিন রোজা পালন শেষে পানি খেতে হবে পর্যাপ্ত। আর বেশি গরম পড়লে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

 

৫. শারীরিক পরিশ্রম কমানো ও শান্ত থাকা

 

রোজার সময় অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম সমস্যার কারণ হতে পারে। গোলাম মাওলা বলছেন একেবারে অলস থাকাও যেমন ক্ষতিকর তেমনি অতিরিক্ত পরিশ্রমও ক্ষতিকর হবে। তাই এসব বিষয়ে সাবধান হতে হবে।

 

৬. সহজে যাতে হজম হয়

 

অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলছেন রোজা পালনকারী ব্যক্তিকে বুঝতে হবে কোন খাবার গুলো তার সহজে হজম হয়। এসব খাবারকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যেসব খাবার হজমে সমস্যা করে সেগুলো না খাওয়াই ভালো। কারণ রোজার সময় শরীরের এনজাইম যা হজর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয় সেটি বন্ধ থাকে।

 

৭. একবারে বেশি খাবার থেকে বিরত থাকা

 

অধ্যাপক গোলাম মাওলা বলছেন সারাদিন রোজা পালনের পর একবারে অনেক খাবার খেলে সেটি ক্ষতিকর হতে পারে। তাই কোনভাবেই অতিরিক্ত খাবার খাওয়া যাবেনা। বরং ফল ও সবজি দিয়ে পরিমাণ মতো ইফতার করা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

 

৮. খাবার কিভাবে খাবেন?

 

গোলাম মাওলা ও নাজমা শাহীন দুজনই বলছেন ধীরে ভালো করে চিবিয়ে খেতে হবে। ইফতারির শুরুতেই পানি শরীরের জন্য উপকারী। পাশাপাশি খেজুর শক্তি যোগাতে ভূমিকা রাখে।

 

৯. স্যুপ হতে পারে দারুণ খাবার 

 

রোজার সময় সারাদিন পর স্যুপ শরীরকে সতেজ করতে পারে এবং খাবার হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখতেও এটি কাজে লাগে। অধ্যাপক গোলাম মাওলা বলেন শাক সবজি তবে বাধা কপি বাদ দিয়ে ফুলকপির স্যুপ বা লেটুস পাতার স্যুপ অনেক উপকারী। লেটুস পাতায় কোন গ্যাস হয়না। আর গাজর খেলে সেটি হালুয়া বানিয়ে অল্প খাওয়া যেতে পারে।

 

১০.খাবার ও জীবনাচরণ ঠিক রাখা

 

অধ্যাপক গোলাম মাওলা বলছেন শুধু খাবারই নয়, বরং এর পাশাপাশি প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম। আর কঠিন শারীরিক পরিশ্রম হয় এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। ইফতারের পর বা সেহেরীর পর ধূমপান থেকেও বিরত থাকা উচিত।

১১. যারা ঔষধ সেবন করেন তারা রোজা করবেন কিভাবে?

 

রমজানে সাধারণত কিছু সমস্যা হয় যার মধ্যে রয়েছে দুর্বলতা, ক্লান্তি কিংবা অ্যাসিটিডি। আর যারা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা কিডনি জটিলতায় ভুগছেন তাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। অধ্যাপক গোলাম মাওলা ও অধ্যাপক নাজমা শাহীন দুজনই এসব বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। মিস্টার মাওলা বলেন চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে রোজা রেখেও ঔষধ সেবন করা সম্ভব। কারণ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ইফতার থেকে সেহরির সময়ে ঔষধ সেবন করা যায়। সব ধরণের খাবার রাখতে হবে খাদ্য তালিকায় ।

ব্যায়াম করবেন কখন?

 

অনেকেই নিয়মিত শরীর চর্চা করেন। কিন্তু রোজার সময়ে অন্য সময়ের মতো ব্যায়াম করা সম্ভব হয়না। অধ্যাপক গোলাম মাওলার পরামর্শ হলো কোন ভাবেই রোজা করে অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করা ঠিক হবেনা। তবে শরীর সায় দিলে হালকা শরীর চর্চা কেউ চাইলে সন্ধ্যার পর করতে পারে, যদিও শরীরের ওপর চাপ পড়ে এমন কিছু করা যাবেনা।

 

তবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হেলথ ইন্সট্রাক্টর মোহাম্মদ ইউনুস বলছেন যারা রোজা করবেন তাদের জন্য নামাজ বিশেষ করে ইফতারির পর রাতে তারাবির নামাজ নিয়মিত আদায় করাটাই বড় ব্যায়াম হতে পারে। এছাড়া ইফতারি বা রাতের খাবারের পর হাঁটাচলাও ব্যায়াম হিসেবে ভালো হবে।

ifter-ইফতার

ব্যায়াম প্রশিক্ষকের অভিমতঃ

 

ঢাকার একটি সুপরিচিত হোটেলের ব্যায়ামাগারের প্রধান প্রশিক্ষক মিন্টু আকরাম বলছেন রোজার সময় অর্থাৎ রোজা পালন করে ভারী উপকরণ ব্যবহার করে ব্যায়াম উচিত হবেনা।

 

“ভারী উপকরণ ব্যবহার সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ব্যায়ামের সময়ও কমিয়ে আনতে হবে”।

 

মিস্টার আকরামের মতে যারা নিয়মিত শরীর চর্চা করেন তাদের জন্য এটি নিয়মিত করা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু রোজা পালন করলে সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে।

 

রোজা করলে ইফতারির পর অন্তত আধাঘণ্টা বিরতি দিয়ে হালকা ওয়ার্ম আপ বা সকালে কিছুটা ওয়ার্ম আপ করা যেতে পারে ফিটনেস ধরে রাখার স্বার্থে।

 

তবে ব্যায়ামের ক্ষেত্রেও নিজ নিজ প্রশিক্ষকের পরামর্শ মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন এই প্রশিক্ষক।

 

সূত্রঃ বিবিসি বাংলা


Comments are closed.